সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৫২ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক॥ কীর্তনখোলা নদী ঘিরেই গোড়াপত্তন বরিশাল শহরের। নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা কর্মযজ্ঞ। নদীই এখানকার মানুষের প্রাণ। কীর্তনখোলায় নির্ভর করে বিশাল জনগোষ্ঠীর আয় ও জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। প্রতিদিন এ নদীর বুক চিরে চলে কতশত নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, কার্গো জাহাজ।
দূষণ-দখলে প্রতিনিয়ত জৌলুস হারাচ্ছে কীর্তনখোলা। এমন পরিস্থিতিতে বরিশালে পালিত হলো আন্তজার্তিক নদীকৃত্য দিবস। এবারের পতিপাদ্য ছিল ‘নদীর অধিকার সুরক্ষা কর, নদীকে নদীর মতো প্রবাহিত হতে দাও।’
আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস সম্মিলিত উদযাপন পর্ষদ বরিশাল এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে দিবসটি পালনে মানববন্ধন করা হয়।
রোববার (১৪ মার্চ) বেলা ১১টায় নগরীর ডিসিঘাট সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীরে মানববন্ধন হয়। এ সময় বক্তৃতা করেন রণজিৎ দত্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীক, রফিকুল আলম, কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু, কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ, শুভংকর চক্রবর্তী ও লিংকন বায়েন প্রমুখ।
বক্তারা নদীর সঠিক সীমানা নির্ধারণপূর্বক দখল ও দূষণমুক্ত করে নদী বাঁচাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, নদীর প্রতি মানুষের করণীয় কী, নদী রক্ষায় দায়িত্ব, দায়বদ্ধতা কতটুকু এসব স্মরণ করিয়ে দিতে দিবসটি পালিত হয়। মানববন্ধন শেষে নদীতে বিভিন্ন রঙের কাগজের নৌকা এবং ভালোবাসার প্রতীক ফুল নদীতে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সাবেক সদস্য সচিব ও বরিশালের উন্নয়ন, পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, কীর্তনখোলা নদী ঘিরেই গোড়াপত্তন হয়েছিল বরিশাল শহরের। নদীর দুই পাশ ডকইয়ার্ড, গোডাউন, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনার কারণে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি হারাচ্ছে। শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কয়েক বছর পর কীর্তনখোলা বুড়িগঙ্গার মতো হয়ে যাবে। পানি থাকলেও জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত নদীর তীরে স্থাপনা তৈরি করে দখল করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে। নগরীর বেলতলা ঘাট সংলগ্ন নদীর জমিতে ডকইয়ার্ড করা হয়েছে। এছাড়া নৌপথে চলাচল করা বিশাল আকৃতির লঞ্চে যাত্রীদের মলমূত্রসহ ময়লা-আবর্জনা নদীতেই ফেলা হচ্ছে। ফলে মারাত্মক দূষণের কবলে নদী।
এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নদীর জমি দখল হলেও বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল কর্মকর্তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তারা বিভিন্ন সময় জরিপ ও দখলদারদের চিহ্নিত করলেও তাদের তালিকা প্রকাশ করেনি। অভিযোগ রয়েছে, তারা দখলদারদের কাছ থেকে মাসোহারা পেয়ে থাকেন।
বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কীর্তনখোলা নদী দখলদারদের খসড়া তালিকা তৈরি হয়েছে। এতে ৪ হাজার ২১৯ দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপ কমিটির কয়েকজন সদস্য স্বাক্ষর না করায় ওই তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে এক হাজার ৭৩৬ দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ২০৮ জনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। চার একর সরকারি খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, চিহ্নিত দখলদারদের উচ্ছেদে বরিশালের ১০ উপজেলায় অভিযান চলমান। কীর্তনখোলা নদীর দখলদারদের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারে বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল কার্যালয়। তাদের ধীরগতি ও উদাসীনতার কারণে কীর্তনখোলায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
Leave a Reply